লেখক*: MONI
Email*: dbashana@gmail.com
শিরোনাম *: এশিয়ার বৃহত্তম রেল
সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ-এর
ইতিকথা
বিস্তারিত বর্ণনা *: ঈশ্বরদী
উপজেলার পাক্শীতে অবস্থিত
এশিয়ার বৃহত্তম রেল সেতু
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এদেশের
উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের সাথে
রেল যোগোযোগের েেত্র বৈপবিক
পরিবর্তন এনেছে। এপারে
ঈশ্বরদী সাঁড়াঘাট এবং ওপারে
ভেড়ামারার দামুকদিয়া-রাইটা
ঘাটের মাঝে সেতুবন্ধনের
সৃষ্টি করেছে এই হার্ডিঞ্জ
ব্রিজ। আর নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে
প্রমত্তা পদ্মা নদী এক সময়
অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের
সাথে কলিকাতার যোগাযোগ বাহন
ছিল কেবল মাত্র জাহাজের
মাধ্যমে। জাহাজগুলো
নারায়নগঞ্জ বন্দর থেকে ছেড়ে
সাঁড়া, দামুকদিয়া ও রাইটা ঘাট
হয়ে কলিকাতা বন্দরে গিয়ে
পৌছাতো। এ অঞ্চলের শাক-সবজি,
মাছ, মাংস থেকে শুরু করে
বিভিন্ন প্রকার কাঁচামাল
কলিকাতা যেতো। এভাবেই এ
অঞ্চলের সাথে কলিকাতার
আত্বিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পাকিস্থান-ভারত বিভক্তির
পূর্বলগ্ন পর্যন্ত এ অবস্থা
বলবৎ ছিল। একদিকে
ব্যবসা-বাণিজ্য অপরদিকে
পর্যটক তথা অবিভক্ত ভারতের
পূর্বঞ্চলীয় রাজ্য আসাম,
ত্রিপুরা, নাগার্যান্ড ও
উত্তর পূর্ববঙ্গের সঙ্গে
কলিকাতা দিলীর সহজ যোগাযোগের
কথা বিবেচনা করে বৃটিশ শাসিত
ভারত সরকার ১৮৮৯ সালে পদ্মা
নদীর উপর দিয়ে সেতু তৈরির
প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯০৮ সালে
সেতু নির্মাণের মঞ্জুরি
লাভের পর প্রধান প্রকৌশলী
হিসেবে বৃটিশ প্রকৌশলী স্যার
রবার্ট গেইলস হার্ডিঞ্জ
ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব
গ্রহণ করেন। ১৯০৯ সালে পদ্মায়
সেতু নির্মাণের জন্য সার্ভে
করা হয়। ১৯১০-১১ সালে প্রথম
কাজের মৌসুম শুরু হলে ভয়াল
পদ্মার দুই তীরে সেতু রী বাঁধ
নির্মণের প্রয়োজনীয়তা দেখা
দেয়। ফলে মূল সেতুর কাজ শুরু
হয় পরের বছর। সেতুটির
প্রস্তাবের উপর প্রথম
প্রকল্প প্রণয়ন করেন স্যার
এস, এম রেনডলস। শুধু সেতু নকশা
প্রণয়ন করেন প্রধান প্রকৌশলী
স্যার রর্বাট উইলিয়াম গেইলস।
প্রথমে সেতুটির কাজ শুরু হয়
বর্তমান স্থান থেকে ১ কিঃ মিঃ
দেিণ। প্রাথমিক কিছু কাজ
হওয়ার পর স্থান পরিবর্তন করে
বর্তমান স্থানে নিয়ে আসা হয়।
সেতুতে রয়েছে মূল পনেরটি
স্প্যান, যার প্রতিটি
বিয়ারিংদ্বয়ের মধ্যবর্তী
দৈর্ঘ্য ৩'শ ৪৫ ফুট এবং
উচ্চতা ৫২ ফুট। প্রতিটি
স্প্যানের ওজন ১ হাজার ২'শ ৫০
টন, রেললাইন সহ ওজন ১ হাজার ৩'শ
টন। সেতুটিতে পনেরটি স্প্যান
ছাড়াও দু'পাশে রয়েছে ৩ টি করে
অতিরিক্ত ল্যান্ড স্প্যান।
ইহাছাড়াও দুটি বিয়ারিং এর
মধ্যবর্তী দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট।
সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৫ হাজার
৮'শ ৯৪ ফুট অর্থাৎ ১ মাইলের
কিছু বেশি। সেতুটি নির্মাণের
ঠিকাদার ছিলেন ব্রেইথ ওয়ালটি
এন্ড ক্রিক। সেতু নির্মাণের
চেয়েও নদীর গতি নিয়ন্ত্রণ করা
কম কষ্টসাধ্য ছিল না। প্রকৃত
পে বড় সমস্যা ছিল প্রমত্তা
পদ্মার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে
স্থায়ীভাবে প্রস্তাবিত
সেতুর নিচ দিয়ে যাওয়া। সেতু
নির্মাণের ১'শ বছর পর আজও এ
সেতু নির্মাণের কাজ বা রিভার
ট্রেনিং ওয়ার্ক পৃথিবীর
প্রকৌশলীদের নতুন ধরনের
অনুপ্রেরণা যোগায়। ১৯১২ সালে
সেতুর গাইড ব্যাংক নির্মাণ
শুরু হয়। এই গাইড ব্যাংক ৪/৫
মাইল উজান থেকে বেঁধে আসা হয়।
সে বছরই সেতুর গার্ডার
নির্মাণের জন্য পাঁচটি কুপ
খনন করা হয় এবং পরের বছর সাতটি
কুপ খনন শুরু হয়। তারপর লোহা ও
সিমেন্টের কংক্রিটের বিশাল
বিশাল পায়াগুলো নির্মত হয়। এই
সেতু নির্মাণ করতে পদ্মার উপর
স্টিমার বার্জ নিয়ে আসা হয়।
সে সময় দিন-রাত কাজ করার পর
ব্রিজ নির্মাণ ও সেতু রা
বাঁধের জন্য মাটির প্রয়োজন হয়
১.৬ কোটি ঘনফুট এবং নদী
নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন হয় ৩ কোটি
৮৬ লাখ ঘনফুট মাটির। মোট পাথর
প্রয়োজন হয় ৩ কোটি ৮ লাখ
ঘনফুট। মোট ইটের গাঁথুনির কাজ
হয় ২ লাখ ৯৯ হাজার টন। মোট
ইস্পাত ব্যবহৃত হয় ৩০ লাখ টন।
মোট সিমেন্ট ব্যবহৃত হয় ১ লাখ
৭০ হাজার ড্রাম ফিল্ড
সিমেন্ট। তৎকালীন হিসেবে
সেতু তৈরির ব্যয় হয় মূল
স্পানের জন্য ১ কোটি ৮০ লাখ ৫৪
হাজার ৭'শ ৯৬ টাকা। এটি
স্থাপনের জন্য ৫ লাখ ১০ হাজার
৮'শ ৪৯ টাকা, নদী নিয়ন্ত্রণের
জন্য ৯৪ লাখ ৮ হাজার ৩'শ ৪৬
টাকা। দুই পাশের রেল লাইনের
জন্য ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ১'শ ৭৩
টাকা অর্থাৎ সর্বমোট ৩ কোটি
৫১ লাখ ২৯ হাজার ১'শ ৬৪ টাকা
ব্যয় হয়। হার্ডিঞ্জ সেতুর
বিশেষত্ব হচ্ছে এর ভিত্তির
গভিড়তা। বাংলাদেশের নরম পলি
মাটিতে বড় স্প্যানের সেতু
গড়তে ভিত্তির গভিড়তা চাই
প্রচুর। ভিত্তির জন্য দুটো
কুয়ো বসানো হয়। একটি পানি
সর্ব নিম্ন সীমা থেকে ১'শ ৬০
ফুট নিচে এবং অপরটি বসানো হয়
১'শ ৫০ ফুট নিচে। ১৫ নম্বর সেত
ু স্তরের কুয়ো স্থাপিত হয়েছে
পানির নিম্ন সীমা থেকে ১'শ ৫০
দশমিক ৬০ ফুট নিচে এবং
সর্বোচ্চ সীমা থেকে ১'শ ৯০
দশমিক ৬০ ফুট অর্থাৎ সমুদ্রের
গড় উচ্চতা থেকে ১'শ ৪০ ফুট
নিচে। সেতু তৈরি কালীন সারা
পৃথিবীতে এ ধরনের ভিত্তির
জন্য এটিই ছিল গভিড়তম। ১৯১২
সালের ফেব্রুয়ারি মাসে
প্রকল্পটিতে কর্মী সংখ্যা
ছিল ২৪ হাজার ৪'শ। এই ২৪ হাজার
৪'শ শ্রমিকের দীর্ঘ ৫ বছর
অকান্ত পরিশ্রমের পর ১৯১৫
সালে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ
হয়। ওই সময়ে ইংরেজি নবর্ষের
দিনে অর্থাৎ ১ লা জানুয়ারি
১৯১৫ সালে ১ ডাউন লাইন দিয়ে
প্রথম চালু হয় মাল গাড়ি। দুই
মাস পরেই ৪ই মার্চ ১৯১৫ সালে
সেতুর উপর ডবল রেল লাইন দিয়ে
যাত্রী বাহী গাড়ি চলাচলের
উদ্বোধন করেন তৎকালীন ভাইসরয়
লড হাডিঞ্জ যার নামে বর্তমানে
সেতুটির নাম করণ হয়েছিল
হাডিঞ্জ সেতু। স্বাধীনতা
যুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী
পশ্চাদের মুখে ব্রীজের
স্প্যানের ১২ নং স্প্যানটিতে
বোমার আঘাতে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়
১৫ নং স্প্যানটি ক্রসগাডার ও
দুটো স্ট্রিকার ও তি
গ্রহস্থ্য হয়। এছাড়া দুই নং
সেতু স্তরের উপরের স্পাতের
ট্রাসেলটিও সেলের আঘাতে
বিশেষ ভাবে তিগ্রহস্ত হয়। দেশ
স্বাধীনতার পর শুরু হয় ১২ নং
স্প্যানের উদ্ধার কাজ ও সেতু
মেরামত। ব্রিটিশ সরকার
অতিদ্রুততার সঙ্গে তাদের নিজ
খরচে বিশ্ব সংস্থার মাধ্যমে
সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত জাহাজ
উদ্ধারকারী কোম্পানি
সেলকোকে দিয়ে উদ্ধার কাজ
করেন। উলেখ্য হাডিঞ্জ ব্রিজ
পূর্ণ গঠনের কাজে যারা জড়িত
ছিলেন তাদের মধ্যে ভারতের
পূর্ব রেলওয়ে মন্ত্রী এইচ কে
ব্যানাজী, চিপ ইঞ্জিনিয়ার আর
কে এম কে সিংহ রায়, ডিবিশনাল
ইঞ্জিনিয়ার ডিজাইন শ্রী ডি সি
সি ডিভশনাল ইঞ্জিনিয়ার শ্রী
পিসিজি মাঝি উলেখ্য যোগ্য।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত তৎকালীন
বাংলাদেশে রেলওয়েকে যারা
নবজীবন দান করেন তারা হচ্ছেন
তৎকালীন বাংলাদেশ রেলওয়ে
বোর্ডের চেয়ারম্যান আঃ মুহিত
চৌধুরী, মেম্বরর এম এ গফুর
ইঞ্জিনিয়ার, মেম্বর সৈয়দ
মর্তুজা হোসেন প্রমুখ।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পূর্ণ গঠনের
কাজে বাংলাদেশ রেলওয়ের আরও
যারা জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে
চিপ ইঞ্জিনিয়ার আমজাদ আলী, এম
রহমান, ডিবিশনাল
সুপারেনটেনডেন্ট সৈয়দ হোসেন,
ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার এম মুনাপ।
বহু ত্যাগ ও পরিশ্রমের ফলে
আবার প্রমত্তা পদ্মার উপর
দিয়ে রেলপারাপার শুরু হয় ১২ ই
অক্টোবর ১৯৭২ সালে। বর্তমানে
বাংলাদেশের দর্শনীয়
স্থানগুলোর মধ্যে হার্ডিঞ্জ
ব্রিজ অন্যতম। প্রতিদিন সকাল
থেকে দূরদূরান্তের বহু মানুষ,
পর্যটক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ
দেখতে আসেন। শীত মৌসুমে এখানে
পিকনিক করতে আসেন অনেকে।
বর্ষার সময় প্রমত্তা পদ্মা
নদীর ভয়াল রুপ মানুষের হৃদয়ে
ভয়ের সঞ্চার করে। জেলেদের
জালে ধরা পড়ে মাছের রাজা
রুপালী ইলিশ। প্রতিদিন হাজার
হাজার দর্শনাথী হার্ডিঞ্জ
ব্রীজের নিচে এসে এ দৃশ্য
দেখে মুগ্ধ হয়।
Add Image (Optional): 2dfhthf.jpg
Powered by EmailMeForm http://www.emailmeform.com/
Email*: dbashana@gmail.com
শিরোনাম *: এশিয়ার বৃহত্তম রেল
সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ-এর
ইতিকথা
বিস্তারিত বর্ণনা *: ঈশ্বরদী
উপজেলার পাক্শীতে অবস্থিত
এশিয়ার বৃহত্তম রেল সেতু
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এদেশের
উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের সাথে
রেল যোগোযোগের েেত্র বৈপবিক
পরিবর্তন এনেছে। এপারে
ঈশ্বরদী সাঁড়াঘাট এবং ওপারে
ভেড়ামারার দামুকদিয়া-রাইটা
ঘাটের মাঝে সেতুবন্ধনের
সৃষ্টি করেছে এই হার্ডিঞ্জ
ব্রিজ। আর নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে
প্রমত্তা পদ্মা নদী এক সময়
অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের
সাথে কলিকাতার যোগাযোগ বাহন
ছিল কেবল মাত্র জাহাজের
মাধ্যমে। জাহাজগুলো
নারায়নগঞ্জ বন্দর থেকে ছেড়ে
সাঁড়া, দামুকদিয়া ও রাইটা ঘাট
হয়ে কলিকাতা বন্দরে গিয়ে
পৌছাতো। এ অঞ্চলের শাক-সবজি,
মাছ, মাংস থেকে শুরু করে
বিভিন্ন প্রকার কাঁচামাল
কলিকাতা যেতো। এভাবেই এ
অঞ্চলের সাথে কলিকাতার
আত্বিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পাকিস্থান-ভারত বিভক্তির
পূর্বলগ্ন পর্যন্ত এ অবস্থা
বলবৎ ছিল। একদিকে
ব্যবসা-বাণিজ্য অপরদিকে
পর্যটক তথা অবিভক্ত ভারতের
পূর্বঞ্চলীয় রাজ্য আসাম,
ত্রিপুরা, নাগার্যান্ড ও
উত্তর পূর্ববঙ্গের সঙ্গে
কলিকাতা দিলীর সহজ যোগাযোগের
কথা বিবেচনা করে বৃটিশ শাসিত
ভারত সরকার ১৮৮৯ সালে পদ্মা
নদীর উপর দিয়ে সেতু তৈরির
প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯০৮ সালে
সেতু নির্মাণের মঞ্জুরি
লাভের পর প্রধান প্রকৌশলী
হিসেবে বৃটিশ প্রকৌশলী স্যার
রবার্ট গেইলস হার্ডিঞ্জ
ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব
গ্রহণ করেন। ১৯০৯ সালে পদ্মায়
সেতু নির্মাণের জন্য সার্ভে
করা হয়। ১৯১০-১১ সালে প্রথম
কাজের মৌসুম শুরু হলে ভয়াল
পদ্মার দুই তীরে সেতু রী বাঁধ
নির্মণের প্রয়োজনীয়তা দেখা
দেয়। ফলে মূল সেতুর কাজ শুরু
হয় পরের বছর। সেতুটির
প্রস্তাবের উপর প্রথম
প্রকল্প প্রণয়ন করেন স্যার
এস, এম রেনডলস। শুধু সেতু নকশা
প্রণয়ন করেন প্রধান প্রকৌশলী
স্যার রর্বাট উইলিয়াম গেইলস।
প্রথমে সেতুটির কাজ শুরু হয়
বর্তমান স্থান থেকে ১ কিঃ মিঃ
দেিণ। প্রাথমিক কিছু কাজ
হওয়ার পর স্থান পরিবর্তন করে
বর্তমান স্থানে নিয়ে আসা হয়।
সেতুতে রয়েছে মূল পনেরটি
স্প্যান, যার প্রতিটি
বিয়ারিংদ্বয়ের মধ্যবর্তী
দৈর্ঘ্য ৩'শ ৪৫ ফুট এবং
উচ্চতা ৫২ ফুট। প্রতিটি
স্প্যানের ওজন ১ হাজার ২'শ ৫০
টন, রেললাইন সহ ওজন ১ হাজার ৩'শ
টন। সেতুটিতে পনেরটি স্প্যান
ছাড়াও দু'পাশে রয়েছে ৩ টি করে
অতিরিক্ত ল্যান্ড স্প্যান।
ইহাছাড়াও দুটি বিয়ারিং এর
মধ্যবর্তী দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট।
সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৫ হাজার
৮'শ ৯৪ ফুট অর্থাৎ ১ মাইলের
কিছু বেশি। সেতুটি নির্মাণের
ঠিকাদার ছিলেন ব্রেইথ ওয়ালটি
এন্ড ক্রিক। সেতু নির্মাণের
চেয়েও নদীর গতি নিয়ন্ত্রণ করা
কম কষ্টসাধ্য ছিল না। প্রকৃত
পে বড় সমস্যা ছিল প্রমত্তা
পদ্মার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে
স্থায়ীভাবে প্রস্তাবিত
সেতুর নিচ দিয়ে যাওয়া। সেতু
নির্মাণের ১'শ বছর পর আজও এ
সেতু নির্মাণের কাজ বা রিভার
ট্রেনিং ওয়ার্ক পৃথিবীর
প্রকৌশলীদের নতুন ধরনের
অনুপ্রেরণা যোগায়। ১৯১২ সালে
সেতুর গাইড ব্যাংক নির্মাণ
শুরু হয়। এই গাইড ব্যাংক ৪/৫
মাইল উজান থেকে বেঁধে আসা হয়।
সে বছরই সেতুর গার্ডার
নির্মাণের জন্য পাঁচটি কুপ
খনন করা হয় এবং পরের বছর সাতটি
কুপ খনন শুরু হয়। তারপর লোহা ও
সিমেন্টের কংক্রিটের বিশাল
বিশাল পায়াগুলো নির্মত হয়। এই
সেতু নির্মাণ করতে পদ্মার উপর
স্টিমার বার্জ নিয়ে আসা হয়।
সে সময় দিন-রাত কাজ করার পর
ব্রিজ নির্মাণ ও সেতু রা
বাঁধের জন্য মাটির প্রয়োজন হয়
১.৬ কোটি ঘনফুট এবং নদী
নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন হয় ৩ কোটি
৮৬ লাখ ঘনফুট মাটির। মোট পাথর
প্রয়োজন হয় ৩ কোটি ৮ লাখ
ঘনফুট। মোট ইটের গাঁথুনির কাজ
হয় ২ লাখ ৯৯ হাজার টন। মোট
ইস্পাত ব্যবহৃত হয় ৩০ লাখ টন।
মোট সিমেন্ট ব্যবহৃত হয় ১ লাখ
৭০ হাজার ড্রাম ফিল্ড
সিমেন্ট। তৎকালীন হিসেবে
সেতু তৈরির ব্যয় হয় মূল
স্পানের জন্য ১ কোটি ৮০ লাখ ৫৪
হাজার ৭'শ ৯৬ টাকা। এটি
স্থাপনের জন্য ৫ লাখ ১০ হাজার
৮'শ ৪৯ টাকা, নদী নিয়ন্ত্রণের
জন্য ৯৪ লাখ ৮ হাজার ৩'শ ৪৬
টাকা। দুই পাশের রেল লাইনের
জন্য ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ১'শ ৭৩
টাকা অর্থাৎ সর্বমোট ৩ কোটি
৫১ লাখ ২৯ হাজার ১'শ ৬৪ টাকা
ব্যয় হয়। হার্ডিঞ্জ সেতুর
বিশেষত্ব হচ্ছে এর ভিত্তির
গভিড়তা। বাংলাদেশের নরম পলি
মাটিতে বড় স্প্যানের সেতু
গড়তে ভিত্তির গভিড়তা চাই
প্রচুর। ভিত্তির জন্য দুটো
কুয়ো বসানো হয়। একটি পানি
সর্ব নিম্ন সীমা থেকে ১'শ ৬০
ফুট নিচে এবং অপরটি বসানো হয়
১'শ ৫০ ফুট নিচে। ১৫ নম্বর সেত
ু স্তরের কুয়ো স্থাপিত হয়েছে
পানির নিম্ন সীমা থেকে ১'শ ৫০
দশমিক ৬০ ফুট নিচে এবং
সর্বোচ্চ সীমা থেকে ১'শ ৯০
দশমিক ৬০ ফুট অর্থাৎ সমুদ্রের
গড় উচ্চতা থেকে ১'শ ৪০ ফুট
নিচে। সেতু তৈরি কালীন সারা
পৃথিবীতে এ ধরনের ভিত্তির
জন্য এটিই ছিল গভিড়তম। ১৯১২
সালের ফেব্রুয়ারি মাসে
প্রকল্পটিতে কর্মী সংখ্যা
ছিল ২৪ হাজার ৪'শ। এই ২৪ হাজার
৪'শ শ্রমিকের দীর্ঘ ৫ বছর
অকান্ত পরিশ্রমের পর ১৯১৫
সালে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ
হয়। ওই সময়ে ইংরেজি নবর্ষের
দিনে অর্থাৎ ১ লা জানুয়ারি
১৯১৫ সালে ১ ডাউন লাইন দিয়ে
প্রথম চালু হয় মাল গাড়ি। দুই
মাস পরেই ৪ই মার্চ ১৯১৫ সালে
সেতুর উপর ডবল রেল লাইন দিয়ে
যাত্রী বাহী গাড়ি চলাচলের
উদ্বোধন করেন তৎকালীন ভাইসরয়
লড হাডিঞ্জ যার নামে বর্তমানে
সেতুটির নাম করণ হয়েছিল
হাডিঞ্জ সেতু। স্বাধীনতা
যুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী
পশ্চাদের মুখে ব্রীজের
স্প্যানের ১২ নং স্প্যানটিতে
বোমার আঘাতে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়
১৫ নং স্প্যানটি ক্রসগাডার ও
দুটো স্ট্রিকার ও তি
গ্রহস্থ্য হয়। এছাড়া দুই নং
সেতু স্তরের উপরের স্পাতের
ট্রাসেলটিও সেলের আঘাতে
বিশেষ ভাবে তিগ্রহস্ত হয়। দেশ
স্বাধীনতার পর শুরু হয় ১২ নং
স্প্যানের উদ্ধার কাজ ও সেতু
মেরামত। ব্রিটিশ সরকার
অতিদ্রুততার সঙ্গে তাদের নিজ
খরচে বিশ্ব সংস্থার মাধ্যমে
সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত জাহাজ
উদ্ধারকারী কোম্পানি
সেলকোকে দিয়ে উদ্ধার কাজ
করেন। উলেখ্য হাডিঞ্জ ব্রিজ
পূর্ণ গঠনের কাজে যারা জড়িত
ছিলেন তাদের মধ্যে ভারতের
পূর্ব রেলওয়ে মন্ত্রী এইচ কে
ব্যানাজী, চিপ ইঞ্জিনিয়ার আর
কে এম কে সিংহ রায়, ডিবিশনাল
ইঞ্জিনিয়ার ডিজাইন শ্রী ডি সি
সি ডিভশনাল ইঞ্জিনিয়ার শ্রী
পিসিজি মাঝি উলেখ্য যোগ্য।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত তৎকালীন
বাংলাদেশে রেলওয়েকে যারা
নবজীবন দান করেন তারা হচ্ছেন
তৎকালীন বাংলাদেশ রেলওয়ে
বোর্ডের চেয়ারম্যান আঃ মুহিত
চৌধুরী, মেম্বরর এম এ গফুর
ইঞ্জিনিয়ার, মেম্বর সৈয়দ
মর্তুজা হোসেন প্রমুখ।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পূর্ণ গঠনের
কাজে বাংলাদেশ রেলওয়ের আরও
যারা জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে
চিপ ইঞ্জিনিয়ার আমজাদ আলী, এম
রহমান, ডিবিশনাল
সুপারেনটেনডেন্ট সৈয়দ হোসেন,
ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার এম মুনাপ।
বহু ত্যাগ ও পরিশ্রমের ফলে
আবার প্রমত্তা পদ্মার উপর
দিয়ে রেলপারাপার শুরু হয় ১২ ই
অক্টোবর ১৯৭২ সালে। বর্তমানে
বাংলাদেশের দর্শনীয়
স্থানগুলোর মধ্যে হার্ডিঞ্জ
ব্রিজ অন্যতম। প্রতিদিন সকাল
থেকে দূরদূরান্তের বহু মানুষ,
পর্যটক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ
দেখতে আসেন। শীত মৌসুমে এখানে
পিকনিক করতে আসেন অনেকে।
বর্ষার সময় প্রমত্তা পদ্মা
নদীর ভয়াল রুপ মানুষের হৃদয়ে
ভয়ের সঞ্চার করে। জেলেদের
জালে ধরা পড়ে মাছের রাজা
রুপালী ইলিশ। প্রতিদিন হাজার
হাজার দর্শনাথী হার্ডিঞ্জ
ব্রীজের নিচে এসে এ দৃশ্য
দেখে মুগ্ধ হয়।
Add Image (Optional): 2dfhthf.jpg
Powered by EmailMeForm http://www.emailmeform.com/
0 on: ": এশিয়ার বৃহত্তম রেল"